ভারতীয় উপমহাদেশে ফাইকোলজির ইতিহাস বর্ণনা কর।
ভারতীয় উপমহাদেশে ফাইকোলজির ইতিহাস বর্ণনা
ভারতীয় উপমহাদেশে শৈবালের গবেষণা শুরু হয়ছিল অণুবীক্ষণিক নমুনা নিয়ে। সর্বপ্রথম শ্রীলঙ্কায় Chara lyphylla নামক শৈবালের একটি নতুন ভ্যারাইটি শনাক্ত করেন বিজ্ঞানী Lebeck। ভারতবর্ষে শৈবাল নিয়ে গবেণানার সেটিই প্রথম পরবর্তীতে ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে Chara zylanica সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন Wildenow সিংহল ও ট্রাংকুইবার থেকে।
১৮৪৯ খিস্টাব্দে' Montague ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে Calothrix indica নামক শৈবাল আবিষ্কার করেন। বোম্বাই এর পুকুর থেকে শৈবাল সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষরন করেন বিজ্ঞানী Griffith। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে Wallich নামক একজন সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন বঙ্গভূমির নিম্নাঞ্চল থেকে Desmids জাতীয় শৈবাল নিয়ে কাজ করেন।
১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে Dicki হিমালয় থেকে প্রাপ্ত কয়েকটি শৈবাল নিয়ে গবেষণার পর রিপোর্ট প্রকাশ করেন। ১৮৯২-৯৩ খ্রিস্টাব্দে Turner "Amemoir of the East Indian fresh water Algae" পুস্তকটি প্রকাশ করেন। R W. West এবং G. S. West ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গাপুর থেকে ৪৫টি Desmid সংগ্রহ করে যথাযথ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন।
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে W. West ও G. S. West সম্মিলিতভাবে Cylon থেকে ৭ টি লোহিত শৈবাল, ৪৯ টি ডায়াটম, ৩৩ টি নীলাভ সবুজ শৈবাল, ২৩৬ টি Desmids এবং ৮৪ টি সবুজ শৈবাল সংগ্রহ করে সেগুলোর বিবরণ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯০৭ সালে তাঁরা উভয়ে ৮৪ টি প্রজাতির ডায়াটম এবং ১৪৮ প্রজাতির Desmids এর বর্ণনা দেন।
১৯০৭ সালে F. F. Fritsh সিংহলের অর্ধবায়ব ও স্বাদুপানির শৈবাল এর বিবরণ প্রকাশ করেন। Boergeson ১৩৩০ সালে লোনা পানির শৈবাল সম্পর্কে গবেষণার জন্য একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং সামুদ্রিক শৈবাল বিষয়ে বেশ কিছু Paper প্রকাশ করেন।
ভারতীয় শৈবালবিদগণের মধ্যে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিলেন ঘোষ (১৯১৯-১৯৩২)। তিনি বার্মা ও পাঞ্জাবের নীলাভ-সবুজ শৈবালের উপর যথেষ্ট গবেষণা কর্ম পরিচালনা করেন। ভারতে “আধুনিক ফাইকোলজির পিতা” হিসাবে M. P. O. Iyengar তাঁর ছাত্রদের সাথে নিয়ে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ছত্রাক সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেন। তাঁর প্রিয় ছাত্র বালকৃষ্ণান, দেশিকাচার্য, কান্থামা (Kanthamma), রামনাথন, সুব্রামানিয়ামকে সাথে নিয়ে তিনি বেশ কিছু ভারতীয় শৈবালের নতুন গণ ও প্রজাতির জীবন ইতিহাস বর্ণনা করেন।
সুব্রমানিয়ামকে সাথে নিয়ে তিনি Cyclotella meneghiniana নামক ছত্রাকে বিয়োজন বিভাজন ও Auxospore তৈরির প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন। Fritschiella tuberosa নামক ভারতীয় স্থলজ শৈবাল সম্পর্কিত তাঁর গবেষণার ফল সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ।
বঙ্গ ও আসাম প্রদেশের শৈবাল সম্পর্কে Brushl ও Biswas -এর গবেষণাও বিশেষ প্রশংসার দাবীদার। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে Bhardwaj (১৯২৮-৩৬) শৈবাল বিষয়ক গবেষণা চালিয়েছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। উত্তর প্রদেশের Cyanophyceae গ্রুপের শৈবাল সম্পর্কে তিনি ব্যাপক গবেষণা করেন।
উত্তর প্রদেশে Zygnemaceae, Oedogoniaceae গোত্র ও Chaetoporales বর্গের শৈবাল সম্পর্কে গবেষণা করেন R. N. Singh (১৯৩৮-৬৮)। জমির লবণাক্ততা কমানোর জন্য নীলাভ-সবুজ শৈবালের ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর আবিষ্কার ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
তাঁর মনোগ্রাফ "Role of blue-green algae in the nitrogen economy of Indian Agriculture" একটি Masterpiece ভারতীয় শৈবাল বিজ্ঞানের ইতিহাসে আধুনিক শৈবালবিদদের মধ্যে S. R. Narayan Rao, R. Subrahmaniam, Dixit, Kundu and Sundarlingam, H. D. Kumar, J. N. Mishra, R. S. Ratton প্রমুখ ফাইকোলজিস্টগণের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে আগামীদিনের শৈবালবিদগণ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url